Skip to main content

পদ্মা বিল
ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার অন্তগত ৮ং রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ বদ্ধজলাভূমি যার নাম বড়বিলা বর্তমানে পদ্মা বিল নামে পরিচিত।

বিলটি তার সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্যের কারণেই পদ্মা বিল নামে পরিচিতি লাভ করেন।
কারণ এখানে প্রচুর পরিমাণে পদ্মা ফুল জন্মায়।
৩৯৯ বর্গকিলোমিটার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আয়তন এর মধ্যে মাত্র সামান্য ৩ শ ২৬ একর জায়গা জুড়ে এ পদ্ম বিলটি বিস্তৃতি লাভ করে।
যে রহস্যময় কারণে এই বিলটি বড়বিলা নামে পরিচিত লাভ করেন তা হলো বৎসরের কোন সময় পানি শুকায় না!



না! শুকানোর উৎবুদ্ধ কারণ হলো
বিলের অভ্যন্তরে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য কুড়ি,
তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নবাইকুরি যা বিস্তৃরিত ৩০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে।

আর এ কারণে বিলটি তার প্রকৃতির সৌন্দর্য সবসময় প্রকাশ করতে পারে।

নাবাইকুরির আলাদা একটি ইতিহাস আছে তার নাই বললাম!!

বিলটির উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে বিলটির সাথে সংযুক্ত রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খাল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জোয়ার খাল, ভোয়ার খাল,আনয় গাং........!

পুরানো ইতিহাস এবং গ্রমের মুরুব্বিদের কাজ থেকে শোনা যায় এক সময় খাল গুলোর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি কানায় কানায় পরিপূর্ণ পূর্ণতা হয়।

আর বিলটি তার প্রকৃতিক সৌন্দর্য আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠে।

যে কারণে বিলটির রহস্যময় তার প্রধান কারণ এখানে সারা বছরেই সব রকমের ফুল ফল পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা এবং আরো মন মাতানো দৃশ্য ফুটে ওঠে। তাছাড়া আরও নানা রকমের নতুন নতুন জলফল আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

এখানে পাওয়া জলফলের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সিংড়া, কাজকলা, পদ্মা, মাঘনা, দেব এর মতো অনেক ফল যা খতে খুব সুস্বাদু।
শীতকালে ধূ ধূ কুয়াশার চাদরে ঢাকা আর ফুটে ওঠে আকর্ষনীয় পদ্মফুল। তখন যদি আপনাকে একটি নৌকা করে নিয়ে যাওয়া হয় বিলের বুকে মনে হবে যেন আপনি চলে গেছেন সেই অজানা প্রাকৃতিক স্পর্শে অার নানা রকমের অতিথি পাখির গাওয়া সেই মন জুড়ানো গান আপনাকে করে তুলবে উতলা।

তাছাড়া পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রবীনদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশাল বড় ভাওয়া যাতে জমায়েত হয় হাজারো মানুষ। দেখা যাচ্ছে এখানে যুবকদের আগমনী বেশি! নানা রকম হৈ-হুল্লা এবং আনন্দের মাধ্যমে মাছ ধরে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী বড়বিলায় আরেকটি ঐতিহ্যময় ঘটনা যা কোনদিন ভুলবার নয়।
বড়বিলা বহুমুখী সমবায় সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর অন্তরে অন্তরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বিশাল এক কুন্দা বাইচের আয়োজন করা হয়।
সেখানে উপস্থিত থাকেন বিভিন্ন ইউপি সদস্যবর্গ।তারা সেখানে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে। এবং সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এবং এদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়,তৃতীয়,স্থান অধিকারী দের পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

তাছাড়া এ বিলের পাশেই রয়েছে হিন্দু জাতি তারা প্রতি বছর তাদের মহান উৎসব দুর্গাপূজা শেষে ঐতিহ্যবাহী বড় বিলাতেই তাদের দেবতাদের সমাধি দেন।

এবং তারা অনেক পূজা এই বিলের মাধ্যমে পালন করে থাকেন।
তাছাড়া এই বিলের রয়েছে প্রাচীন যুগের ঈগল গাছ যায় এখন পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া এই দুই পাশে রয়েছে আয়তনের দিক দিয়ে অনেক বড় দুটি বৃষ্টি গাছ যা মানুষকে হতবুদ্ধি করে ফেলে।

আর এই রহস্যময় বিলের আর একটি রহস্যময় ঘটনা আছে।
যা খুবই মর্মান্তিক !

এ ঘটনাটি বলার আগে আপনাদেরকে অবগত করে দিতে হবে যে বিলটি ৮নং রাঙ্গামাটি ইউনিয়নয়ের দুইটি ভাগে বিভক্ত আছে যা পূর্ব বিল এবং পশ্চিম বিল।
পূব বিলে এর ইউপি সদস্য বেশি অবস্তান করায় চেয়ারম্যান হিসাবে সদস্য লাভ করে পূব বিলেই।

তাই ইউনিয়ন পরিষদ গড়ে ওঠে পূব বিলে।

তাই পশ্চিম বিলের মানুষরা রিলিফের চাউল আনতে যেতে হতো বিলের ঔই পাড়ে অথাৎ,পূব বিলে।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে বিলটির মাঝখানে মানুষ পারাপারের জন্য কোন সেতুর ব্যবস্থা নেই! পারাপার হতে হতো ছোট নৌকা যোগে যা মানুষ বহন করতে পারে ১০থেকে ১৫ জন।
দিনটি ছিল ২০১৪ সাল ২৪শে জুলাই বৃহস্পতিবার রমজান মাসে পশ্চিম পাড়ের মানুষের রিলিফ এর চাউল নিয়ে আসার সময় যাত্রীবিন্দু তাড়াহুড়ো করে নৌকায় উঠে পড়ে ২০ থেকে ২৫ জনের মতো।

নৌকার মাঝি নিষেধ করালো যাত্রীবিন্দু কোন সাড়া দেয়নি কে শুনে কার কথা! তাদের মধ্যে প্রধান লক্ষ্য হলো আগে বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
এক পর্যায়ে নৌকাটি মাঝখানে এসে নৌকার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মাঝি।
এবং নৌকাটি ডুবে যায়। যাতে করে প্রাণ হারায় ৫ জন। এবং গুরুতর আহত হয় ৩ থেকে ৪ জনের মতো আর বাকি রা সাতার কেটে উঠে আছে তীরে।
সাধারন জনতার এবং মানুষের ধারণা যাত্রী বিন্দু বহন করার তুলনায় বেশি সংখ্যক যাত্রী নৌকায় উঠে যাওয়ার নৌকা ডুবেছে।
কিন্তু গ্রামের মুরুব্বিদের ধারণা তা নয় ঠিক উল্টোটা
তাদের মন্তব্য হচ্ছে এই মৃত্যুর পিছনে রহস্য কোন না কোন জিন পেত্নীর আসর আছে কেননা প্রতি বছর অন্তরে অন্তরে কোন না কোন বাহানায় একজন না একজন মানুষে মৃত্যু হয়ি!

রহস্যময় বড়বিলার আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতিমধ্যেই বড়বিলায় উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে ছোট ছোট এক এক করে দুইটি টং দোকান হয়েছে।
যাতে দর্শনার্থীদের ব্যাপক হারে সাড়া পাওয়ায় গ্রামের কিছু সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এর উদ্যোগে বড়বিলার মধ্যপ্রন্তে ধোবলাখোলা নামক স্থানে পানির উপরে ভাসমান রেস্টুরেন্ট এর নির্মন কাজ চলছে যা ইতিমধ্যে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই শেষ হবে আশা করা যাচ্ছে।
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দের কাছ থেকে জানা যায় সকল প্রকার হালকা খাবার থেকে শুরু করে বারি খাবার এর বেবস্থা করবেন তারা।

যাতে করে দর্শনার্থীদের কোনরূপ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে না হয়।
যার সৌন্দর্যের কথা লিখে প্রকাশ করা যাবে না
সুযোগ হলে একবার ঘুরে আসবেন এই বড়বিলা।

এখন আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগবে কেমন করে!আর কিভাবে যাব?

ঢাকা মহাখালী বাস স্টেশন থেকে আলম এশিয়া পরিবহনে (লোকাল সার্ভিস) সরাসরি চলে যেতে পারেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরে। ভাড়া নেবে জন প্রতি ১৮০থেকে ২০০ টাকা। এ বাস সার্ভিসে গেলে সময় একটু বেশি লাগবে। সময় বাঁচাতে চাইলে মহাখালী বাস স্টেশন থেকে এনা পরিবহনে ২৪০ টাকায় চলে যেতে পারবেন ময়মনসিংহের মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস স্টেশনে । সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদরে যেতে বাস বা CNG ভাড়া জন প্রতি ৪০ বা ৬০ টাকা। সেখান থেকে অটো বা CNG পরিবহনে আসতে পরেন কেশরগঞ্জ বাজার ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। কেশরগঞ্জ থেকে আবার অটো পরিবহনে বাবুলের বাজার চলেযেতে পারবেন ভাড়া নেবে জনপ্রতি ২০ টাকা।

বাবুলের বাজার থেকে ব্রেনগাড়ি যোগে সরাসরি চলেযেতে পরবেন ঐতিহ্যবাহী বড়বিলা নতুবা ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই চলে যেতে পারবেন রহস্যময় বড়বিলাতে।



তথ্য দিয়েছেনঃ  খাদিমুল ইসলাম